জেইসি সভায় চীনের ডলারভিত্তিক ঋণের জটিলতার অবসান চায় ঢাকা
জেইসি সভায় চীনের ডলারভিত্তিক ঋণের জটিলতার অবসান চায় ঢাকা-বেইজিং
চীনের ডলারভিত্তিক ঋণে উদ্ভূত জটিলতা নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ও চীন। এ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠেয় যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) সভায় বিষয়টি প্রাধান্য পাবে।
গত দুই বছর ধরে চীনের প্রস্তাব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। চীন চাইছে, বাংলাদেশ যেন ফিক্সড রেটের বদলে বাজারভিত্তিক সুদে বা ইউয়ান (আরএমবি) মুদ্রায় ঋণ নেয়।
চীন ইউয়ানে ঋণ দিতে বেশি আগ্রহী এবং একইসঙ্গে সুদের হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ বা ৩.৫ শতাংশ করতে চায়। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানান, এ কারণেই গত দুই অর্থবছরে চীনের সঙ্গে নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণচুক্তি হয়নি।
চীন সাধারণত দুটি ধরনের ঋণ দেয়—ডলারে প্রেফারেন্সিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট (পিবিসি) এবং ইউয়ানে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন (জিসিএল)।
২০২৩ সালের শেষ দিকে চীনের এক্সিম ব্যাংক পিবিসি ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বাজারভিত্তিক করার প্রস্তাব দেয়। তাদের যুক্তি, চীন বেশি দামে বাজার থেকে ডলার কিনে কম সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দিচ্ছে, এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশ পিবিসি ঋণ আরএমবিতে নিতে রাজি, তবে শর্ত হিসেবে সুদের হার কমানো এবং পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
ইআরডির এক কর্মকর্তা জানান, বাজারভিত্তিক ডলার ঋণে সুদের হার ৬ শতাংশের বেশি হতে পারে, কারণ বর্তমানে এসওএফআর হার ৪.২ শতাংশ। অন্য ফিসহ মোট হার আরও বাড়বে।
অথচ আরএমবিতে ঋণ নিলে পরিশোধের চাপ থাকলেও সমস্যা হবে না, কারণ গত ১০ বছরে এর মানে বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যায়নি। আরএমবিতে ঋণের শর্ত হিসেবে সুদ ১ শতাংশ এবং পরিশোধের মেয়াদ ১৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর চাওয়া হয়েছে।
ইআরডি সূত্র জানায়, সাধারণভাবে পিবিসি ঋণের সুদ ২ শতাংশ হলেও ২০১৯ ও ২০২০ সালে দুটি প্রকল্পে ১.৭১ বিলিয়ন ডলার ঋণে ৩ শতাংশ সুদ নির্ধারিত হয়েছিল। পিবিসি ও জিসিএল উভয় ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ৫ বছর এবং পরিশোধকাল ১৫ বছর। তবে চীন জিসিএল ঋণের পরিশোধকাল বাড়াতে রাজি হলেও পিবিসির ক্ষেত্রে তা চায় না।
ডলার বনাম ইউয়ান: মত দিচ্ছে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইআরডি মতামতের জন্য চীনের প্রস্তাব বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ইউয়ানে ঋণ নেওয়ার পক্ষে মত দেয়। তাদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের উচ্চ সুদের কারণে ডলারভিত্তিক ঋণের খরচ বেড়ে গেছে। এছাড়া ডলারবাজারেও চাহিদা-যোগানের ভারসাম্য নেই। ইউয়ানে ঋণ নিলে সুদ কমবে এবং ডলার দিয়ে ইউয়ান কিনলে বিনিময় হারেও সুবিধা পাওয়া যাবে।
অর্থ বিভাগের মার্চ মাসের এক নথিতে বলা হয়, বর্তমানে ইয়েনভিত্তিক রেফারেন্স রেট 'টিওএনএ' এবং আরএমবি ভিত্তিক 'শিবোর' রেট কম হওয়ায় এসব রেটভিত্তিক ঋণের চাহিদা বাড়ছে। তবে ডলার ছাড়া অন্য মুদ্রায় ঋণ নেওয়া নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ এতে মুদ্রা বিনিময় ও রূপান্তরের ঝুঁকি বেশি।
ইআরডি জানায়, টিওএনএ এবং আরএমবি রেটভিত্তিক ঋণ না নেওয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা চলছে। যদিও বিশ্বব্যাংক ও এডিবি থেকে ইয়েনভিত্তিক বাজেট সহায়তা নেওয়া হয়েছে, চীনের কাছ থেকে আরএমবি ঋণ নেওয়া হয়নি। ফলে গত দুই বছর চীনের সঙ্গে নতুন কোনো ঋণচুক্তি হয়নি।
ইআরডির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ চীন থেকে ১৭.৪৯৯ বিলিয়ন আরএমবি এবং ৭.২৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ পেয়েছে।
No comments